হেমন্ত ঋতু হলো বাংলার ঋতুরাজ। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত এই ঋতুটি বাংলা বর্ষপঞ্জির অক্টোবর-নভেম্বর মাসের সাথে মিলে যায়। শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন। এর পরে আসে শীত। তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস।
হেমন্ত ঋতুতে তাপমাত্রার এই তারতম্য প্রকৃতির উপর বেশ প্রভাব ফেলে। দিনের বেলায় হালকা গরম অনুভূত হয়, কিন্তু রাতের বেলায় বেশ ঠান্ডা লাগে। এই কারণে, হেমন্ত ঋতুতে মানুষকে আবহাওয়া উপযোগী পোশাক পরতে হয়।
হেমন্ত ঋতুতে আকাশের নীল রঙ বেশ মনোরম। সকালের দিকে হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে প্রকৃতি। এই দৃশ্য বেশ মনোমুগ্ধকর।
হেমন্ত ঋতুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায়, মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যায়। এই কারণে, কৃষিজীবীদের জন্য এই ঋতু বেশ কষ্টকর।
হেমন্ত ঋতুতে ধানের ফসল পাকে। এই ফসল ঘরে তোলার মাধ্যমে কৃষকরা তাদের সারা বছরের পরিশ্রমের ফসল সংগ্রহ করে। এছাড়াও, এই ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল, এবং ফুল ফোটে। এইসব ফসল ও ফুলের সুবাসে প্রকৃতি যেন সজীব হয়ে ওঠে।
হেমন্ত ঋতুতে প্রকৃতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। পাখিরা গান গায়। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে। এইসব দৃশ্য প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে তোলে।
হেমন্ত ঋতুর গুরুত্ব
হেমন্ত ঋতুর গুরুত্ব অপরিসীম। এই ঋতুতে ধানের ফসল ঘরে তোলা হয়। এটি কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। হেমন্ত ঋতুতে প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে ওঠে। এই ঋতুতে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ উদযাপিত হয়।
হেমন্ত ঋতুর সাথে সাথে প্রকৃতিও পরিবর্তিত হয়। শরৎকালের ঝকঝকে রোদ ও রঙিন প্রকৃতি ধীরে ধীরে মলিন হতে শুরু করে। আকাশের নীল রঙ গাঢ় হয়ে ওঠে। মাঠের সবুজ ধানের ক্ষেতগুলো হলুদ রঙ ধারণ করে। সকালের কুয়াশার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
হেমন্ত ঋতু মানুষের জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। এই ঋতুতে কৃষকরা ধানের ফসল ঘরে তুলে সারা বছরের খাবারের যোগান নিশ্চিত করে। এছাড়াও, এই ঋতুতে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ উদযাপিত হয়। ফলে মানুষের জীবনে আনন্দ ও উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
বাংলা সাহিত্যে হেমন্ত ঋতুর নানা বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে। কবিরা হেমন্ত ঋতুর রূপ-সৌন্দর্য ও প্রকৃতির পরিবর্তনশীলতা নিয়ে কবিতা লিখেছেন। সাহিত্যিকরা হেমন্ত ঋতুর মানুষের জীবনে প্রভাব নিয়ে গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখেছেন।
হেমন্ত ঋতুর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো যেতে পারে। গ্রামের মাঠে গিয়ে ধানের হলুদ ক্ষেত দেখতে পাওয়া যায়। সকালের কুয়াশায় ভেজানো ঘাসে হাঁটতে পাওয়া যায়। প্রকৃতির শান্ত ও মনোরম পরিবেশে মনকে শান্ত করা যায়।
হেমন্ত ঋতু বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী ঋতু। এই ঋতুর রূপ-সৌন্দর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম।