আম চাষ ও বাগানের পরিচর্যা: মিষ্টি আমের জন্য টিপস
ভূমিকা:
আম আমাদের দেশের জাতীয় ফল। মিষ্টি, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর আম সকলেরই প্রিয়। বাংলাদেশে আমের চাষ ব্যাপকভাবে করা হয় এবং এটি আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আম চাষের উপযোগী জলবায়ু ও মাটি:
আম একটি উষ্ণমণ্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় ফল। এটি 20°C থেকে 30°C তাপমাত্রা এবং 750 থেকে 1500 মিমি বৃষ্টিপাতের জন্য উপযোগী। আমের জন্য দোঁ-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। তবে, এটি বেলে, এঁটেল ও অ্যালুভিয়াল মাটিতেও ভালোভাবে জন্মে।
জাত নির্বাচন:
বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করা হয়। ল্যাংড়া, ফজলি, গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপলি, বারী আম-3, আত্মফল, মোম আম, ক্ষীরসাপাত, তেঁতুল আম ইত্যাদি এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। আপনার এলাকার জলবায়ু ও মাটির ধরন অনুযায়ী জাত নির্বাচন করা উচিত।
বাগান তৈরি:
আম বাগানের জন্য উঁচু, জলাভূমিমুক্ত ও পূর্ব-পশ্চিম দিকে লম্বা জমি নির্বাচন করা উচিত। গাছ লাগানোর আগে জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে।
চারা লাগানো:
আমের চারা বীজ, কলম বা টিস্যু কালচার থেকে তৈরি করা যায়। বর্ষাকালে চারা লাগানোর জন্য উপযুক্ত। গাছের মধ্যে দূরত্ব জাত অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত, 8 থেকে 12 মিটার দূরত্বে গাছ লাগানো হয়।
সার প্রয়োগ:
আম গাছের জন্য জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। জৈব সার হিসেবে গোবরের সার, কম্পোস্ট, সবুজ সার ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। রাসায়নিক সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সার প্রয়োগের পরিমাণ গাছের বয়স ও বাড়ন্ত অবস্থার উপর নির্ভর করে।
সেচ:
আম গাছে নিয়মিত সেচ প্রয়োজন। বিশেষ করে, ফুল ও ফল ধারণের সময় পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে হবে। বর্ষাকাল ছাড়া অন্যান্য সময় সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
আগাছা দমন:
বাগানে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আগাছা গাছের খাদ্য ও পানি শোষণ করে এবং রোগ-বালাই ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
রোগ ও পোকামাকড়:
আম গাছে বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে।
ফল সংগ্রহ:
আমের ফল পাকলে সংগ্রহ করা উচিত। ফল পাকার লক্ষণ হলো:
ফলের রঙ পরিবর্তন হয়ে সবুজ থেকে হলুদ বা লালচে রঙ ধারণ করে।
ফল নরম হয়ে আসে।
ফল থেকে মিষ্টি গন্ধ বের হয়।
ফল হাত দিয়ে সাবধানে ছিঁড়ে সংগ্রহ করতে হবে।
ফল সংরক্ষণ:
আমের ফল খুব বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। সংগ্রহের পর দ্রুত বাজারে বিক্রি করে দিলে ভালো । তবে, কিছুদিন সংরক্ষণ করার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
ফল ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
ফল কাগজ বা পাতলা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা যেতে পারে।
ফ্রিজে রাখলে ফল দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যাবে।
অর্থনৈতিক দিক:
আম চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। আমের চাহিদা বাজারে বেশি থাকায় এর দামও ভালো পাওয়া যায়।
উপসংহার:
উপরে আলোচিত বিষয়গুলি মেনে চললে আপনি মিষ্টি ও সুস্বাদু আম উৎপাদন করতে পারবেন। আম চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে, তাই যারা নতুন উদ্যোম শুরু করতে চান তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প।
আরও কিছু টিপস:
অভিজ্ঞ চাষিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।
কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করুন।
নতুন জাত ও প্রযুক্তি ব্যবহার করুন।
পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি অবলম্বন করুন।