চিয়া সিড একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
চিয়া সীড একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এক আউন্স (২৮ গ্রাম) চিয়া সিডে রয়েছে:
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ২১.৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এটি মুরগির ডিমের চেয়ে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন। প্রোটিন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। এটি দেহের কোষ, টিস্যু ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন এবং সংস্কার করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ৩৪.৪ গ্রাম ফাইবার থাকে। এটি দৈনিক প্রয়োজনীয় ফাইবারের ৩৫%-এর বেশি। ফাইবার হজম স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
চিয়া সিডে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ প্রচুর। প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ১.৮ গ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এটি স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
চিয়া সিডে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রচুর। প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ৪৮৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এটি দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠন এবং সংস্কারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারী।
চিয়া সিডে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণও প্রচুর। প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ৩০০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এটি দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাগনেসিয়ামের ৭০%-এর বেশি। ম্যাগনেসিয়াম পেশী ও স্নায়ু স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ৫৮৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে। এটি দৈনিক প্রয়োজনীয় ফসফরাসের ৬২%-এর বেশি। ফসফরাস হাড় ও দাঁতের গঠন এবং সংস্কারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের কোষ ও টিস্যুর কার্যকারিতা রক্ষায়ও সাহায্য করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ৫৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৩ থাকে। এটি দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি৩-এর ৪২%-এর বেশি। ভিটামিন বি৩ শক্তি উৎপাদন, হজম স্বাস্থ্য রক্ষা এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ১.৭ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে। এটি দৈনিক প্রয়োজনীয় জিঙ্কের ১৫%-এর বেশি। জিঙ্ক শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন এবং প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ০.৯ মিলিগ্রাম তামা থাকে। এটি দৈনিক প্রয়োজনীয় তামার ১০%-এর বেশি। তামা শরীরের রক্ত ও টিস্যুতে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হাড় ও দাঁতের গঠন এবং সংস্কারের জন্যও সাহায্য করে।
চিয়া সিডে পটাশিয়ামের পরিমাণ প্রচুর। প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ৪৫৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। এটি দৈনিক প্রয়োজনীয় পটাশিয়ামের ৩০%-এর বেশি। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং পেশী ও স্নায়ু স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চিয়া সিডে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণও প্রচুর। এটি শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
চিয়া সিডে আয়রনের পরিমাণ প্রচুর। এটি রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
চিয়া সিডের উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার অনেক উপায় রয়েছে যেমনঃ
চিয়া সীড খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। চিয়া সীডকে খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এটি ফুলে উঠে জেলির মতো হয়ে যায়। এতে চিয়া সীড হজম করা সহজ হয়।
দ্রুত ওজন কমাতে চিয়া সীড খাওয়ার একটি কার্যকর উপায় হলো:
চিয়া সীড খাওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এতে চিয়া সীড হজম করা সহজ হয় এবং শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায়।
বাংলাদেশে চিয়া সীডের দাম সাধারণত ১০০ গ্রামে ১০০-১৫০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে চিয়া সীড পাওয়া যায় বিভিন্ন অনলাইন শপ এবং সুপারমার্কেটে।
চিয়া সিডের সতর্কতা
চিয়া সিড একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। এটি নিয়মিত খেলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমানো এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি করা সম্ভব।