অনাবৃষ্টি হলো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাতে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। অনাবৃষ্টির ফলে কৃষি, শিল্প, পরিবহন, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
অনাবৃষ্টির অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বাষ্পীভবনের হার বেড়ে যাচ্ছে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
অনাবৃষ্টির অন্যান্য কারণগুলো হলো:
- মৌসুমী বায়ুর অস্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি: মৌসুমী বায়ুর অস্বাভাবিক গতিপ্রকৃতির কারণেও অনাবৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমী বায়ু যদি তার স্বাভাবিক গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে সে অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে।
- সাইক্লোন, হারিকেন, টর্নেডো ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ: এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও অনাবৃষ্টি হতে পারে। এই দুর্যোগগুলোর ফলে আবহাওয়ার স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে।
- মানুষের কর্মকাণ্ড: মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণেও অনাবৃষ্টি হতে পারে। বন উজাড়, জলাভূমি ভরাট ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশে অনাবৃষ্টি একটি নিয়মিত ঘটনা। প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনাবৃষ্টির কারণে বন্যা, খরা, দাবদাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। অনাবৃষ্টির কারণে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়, খাদ্য সংকট দেখা দেয়, দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায় এবং জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে।
অনাবৃষ্টি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বন উজাড়, জলাভূমি ভরাট ইত্যাদি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে অনাবৃষ্টির প্রভাব কিছুটা কমানো সম্ভব।
অনাবৃষ্টির প্রভাব
অনাবৃষ্টির প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- কৃষি: অনাবৃষ্টির কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে খাদ্য সংকট দেখা দেয় এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়।
- শিল্প: অনাবৃষ্টির কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে কর্মসংস্থান হ্রাস পায় এবং অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
- পরিবহন: অনাবৃষ্টির কারণে পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। ফলে পণ্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটে।
- স্বাস্থ্য: অনাবৃষ্টির কারণে মশা, টিক ইত্যাদি পোকামাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। ফলে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ে।
অনাবৃষ্টি মোকাবেলা
অনাবৃষ্টি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ জোরদার করা।
- বন উজাড়, জলাভূমি ভরাট ইত্যাদি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা।
- বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
- কৃষিক্ষেত্রে পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
- অনাবৃষ্টির সময় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অনাবৃষ্টি একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর প্রভাব মোকাবেলায় সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।